শিল্প ও সাহিত্য

বঞ্চিত জনপদ থেকে সহনশীলতার ডাক

মোঃ ইউনুছ আরফিন::

সিয়াম-সাধনার মাস থেকে শুরু হোক ছিন্নমূল, ভবঘুরে ও আত্মীয় স্বজনদের প্রতি সহনশীলতা, দাম্ভিকতা মুছে যাক আখলাক থেকে, হৃদয় ব্যথিত হোক এতিম ও অনাহারী- অবহেলিত মানুষের ব্যথায়। মরিচিকা পড়া কলব ঈমানী জজবায় পরিশুদ্ধ হোক।

অন্তত এই রমজান মাসের উছিলায় হলেও আসুন সকল দাম্ভিকতার খোলস থেকে বেরিয়ে আসি, দিল কে নরম করি, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে নিজ থেকে আত্মীয় স্বজনদের খবর রাখি। অতীতে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে কাটানো সুন্দর মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করে আসুন ভুলে যাই আজকের হিংসা বিদ্বেষ যত কলহ। কেননা সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যপারে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেনঃ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে শপথ করে এবং কাফ্ফারা আদায় করে তা ভঙ্গ না করে এর ওপরেই স্থির থাকে সে বড় পাপী।
তাই আসুন ফাটল ধরা আত্মীয়তার বন্ধনগুলো কে মিষ্টিমধুর করে তুলি। শুধু আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর সন্তুষ্টির জন্য।

আসুন পথ প্রান্তরে ক্ষুধার তাড়নায় যে মানুষগুলো ছটফট করে, ফুল বিক্রি করে দিনশেষে রাতের ক্লান্ত-খনে যাত্রী-ছাওনি কিংবা রাস্তার মোড়ে ঘুমিয়ে যায় তাদের পাশে দাঁড়াই, তাদের মধ্যে যারা শিশু বা কিশোর কিশোরী তাদের কে ‘শিশু সদনে’ ভর্তি করে দেই। আসুন অবহেলিত নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের জনপদে ফুল ফোঁটাই। যে ফুলের সৌরভে মুখরিত হবে আমাদের এই বাংলাদেশ। আসুন এভাবে দায়িত্ব নিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে অগ্রণী ভূমিকায় স্বাক্ষর রাখি।

আসুন দায়িত্ব নেই নিজ নিজ এলাকার এতিম ছেলে মেয়েদের। যাদের ভালো কোনো খাবারের স্বাদ নেওয়ার বা ভালো পোশাক পরিধানের ইচ্ছাটুকু স্বপ্ন’ই রয়ে যায়। স্বপ্ন’ই রয়ে যায় যাদের বাবা’হীন সংসারে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার। প্রচুর মেধা ও উদ্দীপনা থাকা সত্যেও যাদের খাতা কলমের অভাব থেকে যায়। স্কুল মাদ্রাসা থেকে এসে গায়ের পোশাকটি ধুয়ে দিয়ে পরদিন সে পোশাক পরে স্কুলে যাওয়ার চিন্তায় যারা মত্ত তাদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিজ্ঞা করি। আসুন তাদের জন্য নিজ নিজ উপজেলায় “এতিম ট্রাস্ট” গঠন করি। তাদের দুঃখ বিমোচনে আমরা এগিয়ে আসি। আল্লাহ পাক কোরআনুল কারিমে এতিমদের সম্পর্কে বলেছেন:
আল্লাহ তোমাদের জন্য যে ধন-সম্পত্তি নির্ধারণ করেছেন তা হতে তাদেরকে ভক্ষণ করাতে থাক, পরিধান করাতে থাক এবং তাদের সাথে সদ্ভাবে কথা বল।(সূরা নিসা আয়াত ৫)

এই সংকটময় সময়ে কে কখন কবরবাসী হয়ে যাই বলা যায় না! আসুন, কবরবাসী হওয়ার আগে দুনিয়াবাসীর কাছে নিজেকে একটু সহনশীল ভাবে প্রেজেন্টেশন করি। অবহেলিত নিপীড়িত বঞ্চিত ও আত্মীয় স্বজনদের কাছে নিজেকে মহাপ্রাণ মানুষ হিসেবে তৈরি করি। আর মহাপ্রাণ হতে হলে নিজের ভেতর লালন করা দাম্ভিকতার অবসান ঘটাতে হবে, ইগো’র পরিবর্তন ঘটাতে হবে। যতই ভাবেন ‘আমার একটা পদ মর্যাদা আছে না? কিভাবে গরীব আত্মীয় ও ছিন্নমূলের কাঁধে হাত রাখি? আর হ্যাঁ মহাপ্রাণ হতে হলে প্রথমেই মগজ থেকে এই ভাবাদর্শ দূর করতে হবে। তবেই নিজের ভেতর অন্য এক আমিত্ব খুঁজে পাবেন, হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করবেন। নিজেকে কৈশোরের বাঁধন হারা বালকের মত মনে হবে যখন দেখবেন আপনার পরিবর্তনের কারণে সবাই মিষ্টি মধুর বুলিতে ডাক খোঁজ নিচ্ছে, সবাই আপন আপন ভাব নিয়ে আপনার উপর বিভিন্ন আবদার খাটাচ্ছে, তখন সত্যি একটা আত্মতৃপ্তি পাবেন।

মাহে রমজানে মানুষের হৃদয় অনেকটাই নরম থাকে। (আমরাতো অনেক নৈপুণ্যতার সাথে চলি, কারো দূর্বোলতার সুযোগ পেলে- খুব চৌকস ভাবে সুযোগটা কাজে লাগাই) তাহলে আসুন না ভাই, এই রমজান মাসে হৃদয় নরম থাকার সুযোগটি কাজে লাগাই, নানা-নানি দাদা-দাদি, মামা,কাকা, ফুফু,খালা সহ ভাই-বোন ইত্যাদি’ যাদের সাথে মানে-অভিমানে দীর্ঘ দিন কথা হয় না, তাদের মধ্যে যারা নিকটতম তাদের সাথে স্ব-শরীরে গিয়ে দেখা করি আর যারা দূরবর্তী তাদের সাথে মুঠোফোনে দু- তিন মিনিট কথা বলি, একটু নত আর উদারতা দেখানোর ফলে নিজেকে অনেক বড় মনে হবে, কথায় আছেঃ-
“মনের চলাচল যতখানি মানুষ ততখানিই বড়”

তাই আসুন মনকে প্রসস্থ করি,আত্মীয় স্বজন সহ সকল বঞ্চিত মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেই, মহান রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টির জন্য । বেঁচে থাকি সবার অন্তরে, আদরের সাথে, ভালোবাসার সাথে, সম্মানের সাথে।

লেখক: মোঃ ইউনুছ আরফিন
বাংলা বিভাগ, অনার্স ৪র্থ বর্ষ
রাঙ্গামাটি সরকারি কলেজ

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button