বুক রিভিউ

বইয়ের নামঃ তোত্তো-চান; জানলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটা

বুক রিভিউ

বইয়ের নামঃ তোত্তো-চান; জানলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট মেয়েটা
মূল লেখকঃ তেৎসুকো কুরোয়ানাগি
অনুবাদকঃ মৌসুমী ভৌমিক
প্রকাশনাঃ ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ইন্ডিয়া।
পৃষ্ঠাঃ ১৪৯.
রিভিউ লিখেছেন: শেখ বিবি কাউছার

আজ যে বইটি রিভিউ করছি বইটির নাম তোত্তো-চান। যে বইগুলো পড়লে মনে গেঁথে যায় সে বইগুলো রিভিউ করতে আমার বেশ ভালো লাগে। আজ যে বইটি রিভিউ করছি বইটির নাম তোত্তো-চান।
১৯৮১ সালের কথা। তেৎসুকো কুরোয়ানাগি নামে জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্বের স্মৃতিকথা হিসেবে বইটি প্রকাশ হয়। যেখানে তিনি নিজের ছেলেবেলার স্কুলজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। প্রকাশের পরপরই বইটি জাপানে ব্যাপক সাড়া ফেলে, বেস্টসেলার বইয়ের তালিকায় নাম লেখায়। অনেক ভাষায় বইটা অনূদিতও হয়েছে। বাংলায় অনূদিত বইটার নাম “তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি”।

শিক্ষা ব্যবস্থার কথা উঠলেই আমরা সবার আগে জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থার উদাহরণ দেয়।
প্রিয় পাঠক, বইটিও সে-ধরনের।

প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে,
একজন প্রকৃত ভালো মানুষ হতে হলে তার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তিনজন মানুষের ।
এক. মা-বাবা
দুই. ভালো শিক্ষক,
তিন. ভালো বন্ধু।

পুরো রিভিউটি শেষে আশাকরি কথাটির মর্মার্থ বুঝা যাবে।

মূল কথাঃ

জাপানে বসবাসকারী তোত্তো-চান নামের এক দুষ্টু মেয়ের জীবন কাহিনী এটি। তার দুষ্টুমির জন্য তাকে স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে তাকে তোমোই নামে একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। এই স্কুলের বিশেষত্ব এটি ট্রেনের বগিগুলিতে স্থাপন করা হয়েছিল। সেই স্কুলে, তারা অন্যান্য স্কুলের মতো শুধু পাঠই শেখায় না, তারা আমাদের চারপাশের প্রকৃতি ও শেখায় কিভাবে এই বিস্ময়কর বিশ্বের অংশ হিসাবে একজন ভাল মানুষ হতে হবে।

বইটি আমাদের বলে দেয়, একজন শিক্ষকের সাফল্য ছাত্রদের উচ্চ পদ, চাকরি এবং আর্থিক অবস্থার সাথে নয়। শিক্ষার্থীরা কতটা ভালো মানুষ হয় তা দিয়েই পরিমাপ করা উচিত।

উক্তিঃ১. তোত্তো-চানের মা সম্পর্কে,

এখানে আমার মায়ের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। মা আমার কুড়ি বছরের জন্মদিনে কথাটি প্রথম বলেছিলেন, ‘ ছোটবেলায় তোমাকে কেন স্কুল পান্টাতে হয়েছিল জানো?’ আমি ‘না’ বলাতে মা বেশ সহজভাবে বলেছিলেন, ‘ তোমাকে প্রথম স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো।’ অথচ মা তো সেই সময়ই বলতে পারতেন, ‘ কী করবো তোমাকে নিয়ে? কোথায় যাবো? একটা স্কুল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে, আবার যদি তাড়িয়ে দেয়?’ সেদিন মা যদি ওভাবে বলতেন তাহলে আমি কতই না জানি ঘাবড়ে যেতাম আর তোমোই গাকুয়েনের রেলগাড়ির কামরা আর লতাপাতা গেটের আনন্দটাই উপভোগ করতে পারতাম না৷ ওরকম একজন মা পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার!

উক্তি ২: দুরন্তপনাপনার কারণে তোত্তো-চানকে তার আগের বিদ্যালয়ে থাকার সুযোগ দেয়নি। কিন্তু সেই তোত্তোচানকেই কি না নতুন স্কুলের প্রধান শিক্ষক
সোসাকু কোবায়াশি কথাটি বলতেন, ‘ জানো তো, তুমি কিন্তু সত্যিই খুব ভালো মেয়ে। ‘ এই কথাটাই হয়তো ওর জীবনকে একটা দিশা দিয়েছিলো।

সোশাকু কোবাইয়াশি ছিলেন একজন অসাধারণ শিক্ষক যার চিন্তাচেতনা ছিলো যুগান্তকারী।তাঁর কাছে সকল শিশু শিক্ষার্থীই সমান। তিনি যেমন ভালোবাসতেন তোত্তেচানের মতো চঞ্চল শিশুকে, তেমনি ভালোবাসতেন ইয়াসুয়াকিকে যে ছিলো পোলিও রোগে আক্রান্ত। স্কুলে তত্তোচান একজন ভালো বন্ধুও পেয়েছিল।

বইটি জাপানে এবং বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বাচ্চাদের পাঠ্য হিসাবে সংযুক্ত হয়েছে। মৌসুমি ভৌমিকের করা প্রাণবন্ত বাংলা অনুবাদ পড়ে মনে হল বাচ্চাদের নিয়ে অত্যন্ত সহজ সরল ভাষায় অনুবাদই না করেছেন তিনি। এভাবে করতে পারাটাও অনুবাদকের সার্থকতা!

যদি হতে পারতাম প্রধান শিক্ষক সোশাকু কোবাইয়াশি!আপনি যদি একজন শিক্ষক হয়ে থাকপন তাহলে বইটি পড়া শেষে আপনার এরকমই মনে আসবে।

Please follow and like us:
Back to top button