বুক রিভিউ ☞ পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
বুক রিভিউ
বইয়ের নামঃ বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ
লেখকঃ রউফুল আলম
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৫৮
প্রবন্ধ সংখ্যাঃ ৫২
প্রকাশনীঃ জ্ঞানকোষ প্রকাশনী
মূল্যঃ ২২৫
আপনার কণ্ঠে ছিলো হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালার সুরের চেয়েও বড়ো বেশি মোহন জাদু। ঘর ছেড়ে, খাবার ছেড়ে, প্রিয়তম স্ত্রীর বাহুবন্ধন ছেড়ে, কোমল জায়নামাজ থেকে উঠে, মানুষ আপনার কথা শুনতে ময়দানে এসেছিলো। আপনি তাদের বললেন, ‘ এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’। আপনার মোহন জাদুতে প্রতিটি ঘর হয়ে উঠল বাঙকার।
আমি জানি আপনি আজও ভালো নেই। আপনি জেনে থাকবেন, আপনার কথা বলে বলে ওরা আজ রাষ্ট্রকে লুট করে।আপনার নাম বেচে,কী নিদারুণ অনিয়ম করে বেড়ায় ওরা সমাজে। আপনার আর্দশের নাম ভাঙিয়ে কী নৈরাজ্য করছে ওরা। আপনি কী চেয়েছিলেন, এ দেশটা ধর্ষকদের হাতে চলে যাক ? আপনি কী চেয়েছিলেন, এ দেশটা ঘুষ-দুর্নীতি আর লুটপাটে নুয়ে পড়ুক? আপনি কী চেয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঝিমিয়ে পড়ুক অনিয়ম আর দলীয়করণে? আপনি কী চেয়েছিলেন,
মানুষগুলো কাজ না করে শুধু লেজুড়বৃত্তি করে বেঁচে থাকুক? আপনি কী চেয়েছিলেন, মানুষের কথা বলার অধিকার বিলীন হয়ে যাক? – স্বাধীনতা কী এ জন্যই এনেছিলেন? এই অনুপ্রবন্ধ ‘প্রিয় বঙ্গবন্ধু’ দিয়ে শুরু হয়েছে বইটির লেখা। হয়তো অনেকের মনের কথাগুলোই প্রকাশ পেয়েছে লেখকের এই প্রবন্ধে।
লেখকের প্রথম প্রকাশিত ‘ একটি দেশ যেভাবে দাঁড়ায় ‘ এবং নতুন প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ’বই দুটি সবার জন্য হতে পারে একটি গাইডলাইন। যারা শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ে কাজ করছেন অর্থাৎ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দেশের নীতিনির্ধারক,শিক্ষক,কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের জন্য বই দুটিতে রয়েছে দিকনির্দেশনা।
একটা জাতির সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ কী বলুন তো? হ্যা, সে মূল্যবান সম্পদ হলো তারুণ্য বা তরুণ প্রজন্ম। তাদের যদি সঠিকভাবে পরিচর্যা করা যায় তাহলে তারা হয়ে উঠতে পারে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের এক একজন মস্তিস্ক। আর তাদের ভিত তৈরি করতে হয় সততা,মেধা,দক্ষতা ও দায়িত্ববোধ দিয়ে।
যে দেশে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নেয়ার মতো তরুণ সমাজ আছে,সে দেশটাই বিশ্বে উন্নত। আর এই তরুণদের গড়তে প্রয়োজন বিশ্বমানের শিক্ষা, বিদ্যালয় ও শিক্ষক।আর বিশ্বমানের প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো।
সাম্প্রতিক সময় যে দেশটি নিয়ে আমরা খুব আলোচনা-সমালোচনা করছি সেটা হলো ইসরাইল। আমরা তাদের তৈরি করা জিনিস-পত্র বয়কট করার কথা বলছি তাদের তৈরি যোগাযোগ মাধ্যম দিয়েই। কিন্তু আমরা একটু চিন্তা করে দেখি না যে, তারা কিভাবে জ্ঞান- গরিমায়, গবেষণায় এত উন্নত হলো?
‘ভাগ্য হত্যাকারী এক জাতি’ এই প্রবন্ধে লেখক বলেন, ইসরাইল এক ভাগ্যবতী দেশ। যে দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন একজন গবেষক। তাঁর নাম কাইম ভাইজম্যান। ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরপরই তিনি হাত দিলেন গবেষণা সমৃদ্ধ করার কাজে। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আনলেন ব্যাপক পরিবর্তন। ইউরোপে যতো খ্যাতনামা বিজ্ঞানী (মূলত ইহুদি) আছে,তাদেরকে ধরে নিয়ে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। তাদের দুই জনের নাম বলছি – একজন আলবার্ট আইনস্টাইন,অন্যজন ফ্রিৎজ হাবার। প্রতি আটশ জনে একজন গবেষক। কিন্তু ষোল কোটির বাংলাদেশে এক হাজার গবেষক তৈরি করতে পারি নাই আমরা।একটা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর দেশ কী করে সমরাস্ত্রে ও আকাশ সীমায় পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী হতে পারে, ইসরাইল তার একমাত্র উদাহরণ।
আসলে দেশটার এত উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে গবেষণা ও শিক্ষায় বিশেষ জোর দেয়ার কারণেই। এই দুটো জিনিস নিয়ে তারা কোনো আপোষ করে না।কোনো কোটা নেই, কোনো নেতা নেই,কোনো জাতের তোয়াক্কা নেই। আর এজন্যই ইসরাইল আজ এতোদূর। আর আমাদের দেশে গবেষণার কথা আসলেই মানুষ বলে, বাংলাদেশ গরিব।বাংলাদেশ আসলে গরিব না।আমরা দুর্নীতিতে ধনী, সে কারণে দৃশ্যত গরিব। অর্থহীন, পরিকল্পনাহীন কাজে টাকা ব্যয়ে আমরা সর্বোৎকৃষ্ট।
বাংলাদেশ দুজন বিখ্যাত গবেষকের কথা উঠে এসেছে তাঁর ‘সত্যেন্দ্রনাথের দীপ্তি’ ও ‘ওয়াজেদ মিয়া-এক অসাধারণ মানুষ’ এই অনুপ্রবন্ধ গুলোতে।
সে সময় উন্নত টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি ছাড়াই কিভাবে বড় বড় বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীদের খবর রাখতেন সত্যেন্দ্রনাথ । এমনকি বাংলাদেশ বসেই সুদূর প্রবাসে চিঠি পাঠালেন খোদ আইনস্টাইনকে। সাথে গবেষণা কর্ম। বোস সুযোগ পেলেন ইউরোপ ভ্রমণের। এই প্রদীপটি কিভাবে জ্বলে আবার ক্ষীণ হয়ে গেল। দুর্ভাগ্য আমাদের, প্রদীপের আলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারিনি আমরা। পৃথিবীর একশো জন মেধাবীর জীবনী যদি আপনি পড়েন,তাহলে দেখবেন, নব্বইজনই সেরকম আলোকিত শিক্ষক পেয়েছেন। এখন এদিক দিয়ে একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের প্রচেষ্টাই বা কতটুকু?
আরেকজন হলেন বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়া। লেখক বলেন, তিনি ছিলেন খুবই জ্ঞানমুখী একজন মানুষ। রাজনীতি বা ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কিছু করার মতো মানুষ ছিলেন না তিনি। ছিলেন বাংলাদেশ এটমিক এনার্জি কমিশনের চেয়ারম্যান। এই রকম জ্ঞানাপিপাসু, ক্ষমতা নির্মোহ মানুষদেরই প্রয়োজন ছিলো দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে।
আসলে এত বড় মাপের একজন বিজ্ঞানী সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। অথচ ইউরোপ-আমেরিকার দিকে তাকিয়ে দেখুন, তারা জ্ঞানীদের কতোই না সম্মান দেয়, জ্ঞান করে শ্রদ্ধা। সেখানে চেয়ারের বলে, ক্ষমতার বলে কিংবা পদের বলে জ্ঞান ও জ্ঞানীকে শাসন করে না।
লেখকের প্রতিটি লেখায় ফুটে ওঠেছে একটি দেশের জন্য গবেষণা কত প্রয়োজন। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান,আমেরিকা, সিঙ্গাপুর এমনকি আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতও অনেক এগিয়ে গেছে গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের একুশ শতক এসে চলে যাচ্ছে তারপরও আমরা এখনও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে গবেষণার মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছি না।
যেখানে ইউরোপ-আমেরিকা এত উন্নত দেশ হওয়ার পরও তারা অবিরাম গবেষণাকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমাদের গবেষণা করার মতো কত কিছুই না আছে! মনে হয়, আমাদের চোখ থেকেও আমরা অন্ধ।
‘বাছায়ের সংস্কৃতি’ প্রবন্ধে লেখক বলেন, পশ্চিমের দেশগুলো যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, তার গভীরে বহু কারণের মধ্যে অগ্রগণ্য হলো সঠিক জায়গায় জন্য সঠিক মানুষকে বাছাই করার সংস্কৃতি। Pick the right person for the right purpose! Even one person is enough to ruin the system.
‘বাবার পরিচয়’ অনুপ্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেন কিভাবে নিজ কর্মগুণে দাঁড়ানো যায় তা নিয়ে। নিজ কর্মগুণে বড়ো হতে না পারলে,বাবার নামে কী-ই বা আসে যায়!
তোমার বাবা কী করেন? স্কুল কিংবা কলেজে হয়তো এ কথা আমাদের অনেকবার শুনতে হয়েছে। কিন্তু সবার বাবা যে বড় বড় অফিসার তা কিন্তু না। কারো বাবা কৃষক কারো বাবা রিকসা চালায়,কারো বাবা হয়তো চায়ের দোকান চালান আবার কারো বাবা হয়তো পরিবারের সঙ্গ ছেড়েছেন। আবার এমন আছে কারো বাবা কিছুই করেন না। পৃথিবীর এতো এতো মানুষের নাম যে আমরা জানি,তাদের পিতার নাম কে রেখেছে মনে। আপনি কী আইনস্টাইন, হাইজেনবার্গ, নীলস বোর,ফাইনম্যান এদের কারো বাবার নাম কী আপনার জানা আছে? মানুষের সবচেয়ে সুন্দর পরিচয় হলো তার নিজ কর্ম।
বিদেশে পড়তে গেলে সেখানে কার বাবা কী করে তা মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। মূখ্য বিষয় হল তার নিজ মেধা ও কর্ম।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা অবকাঠামোগত কত উন্নয়নই না করছি কিন্তু শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকের মানের দিকেও নজর দেয়া প্রয়োজন। আমরা কী চাইলে পারিনা শিক্ষকদের(স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত) জন্য একটি উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ শিক্ষক প্রশিক্ষণ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে। যেখানে প্রশিক্ষণ দিবে দেশের এবং দেশের বাইরে থেকে আসা বড় বড় শিক্ষক ও গবেষকগণ। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষকরা ছড়িয়ে পড়তো স্কুল থেকে শুরু করে সবোর্চ্চ বিদ্যাপীঠ পর্যন্ত।
‘ভাবনার স্ফুরণ’ প্রবন্ধে লেখক বলেন, জীবনের শ্রেষ্ঠতম এক অধ্যায় কেটেছে স্টকহোম ইউনিভার্সিটিতে। জ্ঞান অর্জন যে এতো আনন্দময়, এতো প্রাণবন্ত, এতো স্বপ্নময় হতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না। সেখানে না গেলে কোনোদিনই বুঝতাম না,শেখার আনন্দই মানুষকে পৃথিবীতে এগিয়ে নেয়। সেখানে লেকচার দেয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে গবেষকরা আসতো।গবেষকদের আমন্ত্রণ জানানোর কারণ তাদের কাছ থেকে সৃষ্টির কথা শুনা। তাদের সৃষ্টির কথা জেনে নতুন নতুন ভাবনার জন্ম দেয়া। একজনের সৃষ্টি, অন্যের মাথায় নতুন ভাবনা তৈরি করে।
আমাদের দেশে বছরে কয়েজন গবেষককে ডাকা হয়? কয়জনকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হয় – আসুন, একটু বলে যান। অথচ কত টাকা অযথা খরচ করে ফেলা হয় তার হিসাব কী আমরা রাখি। হয়তো এখন সময় এসেছে আমাদের মেধা গুলো জাগানোর।
‘শিক্ষক’ নামক এই শব্দটিকে সবসময় দেখা হয় পদমর্যাদার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু এটাকে যদি কর্মের চোখে বড় করে দেখা হতো তাহলে দেশ আরো এগিয়ে যেতে পারতো সামনের দিকে। যেমন দরুণ কেউ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক,কেউ মাধ্যমিকের,কেউ কলেজের, কেউ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের। আবার এখানেও কতো পার্থক্য করা হয়। যেমন কেউ ক্যাডার,আবার কেউ বা নন ক্যাডার,কেউ এমপিও ভুক্ত আবার কেউ বা নন এমপিও। আরো একটা চরম পার্থক্য দেখলাম প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে।সেখানে বিসিএস(শিক্ষক) ক্যাডারদের জন্য এক ধরনের ব্যবস্থা আবার এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য আরেক ধরনের। চিন্তা করে দেখুন তো, যে দেশটাতে ‘শিক্ষক’ পদটা নিয়েই এতো পার্থক্য করা হয় সে দেশটা শিক্ষা ক্ষেত্রে কতটুকুই বা এগুতে পারে? দেশটাতে যদি যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার উপর ভিত্তি করে পদ (পোস্ট) বা মর্যাদা দেয়া যেত তবে ঘুষ, দুর্নীতি অনেক কমে আসত।
‘কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ প্রবন্ধে লেখক বলেন, আমাদের আরেক অভিনব সৃষ্টি হলো ‘বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ’! কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ’ হতে পারে, এবং জাতীয় পর্যায়ে আমরা সেটা মেনেও নিচ্ছি-ভাবাই যায় না। ইমপেরিয়াল কলেজ, বোস্টন কলেজ, ডার্টমাউথ কলেজ এমন বহু প্রতিষ্ঠান যে শুধু ‘কলেজ’ নাম ধারণা করেই দুনিয়া খ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে পারে -সেটা বোধহয় আমাদের জানা নেই। তবে উচ্চ শিক্ষা আর প্রশিক্ষণের জন্য কলেজের শিক্ষকদেরই আগে প্রাধান্য দেয়া উচিত বলে মনে করেন লেখক।কারণ তারা শিখে এলে হাজার হাজার তরুণ তৈরির কাজটা সহজ হবে। কিন্তু ভ্রমণ বা ট্রেনিং করার সুবিধা নির্দিষ্ট কিছু ক্যাডারের লোকজনই পায় বেশি। আর এখানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের কথা নাই বা বললাম।
লেখকের লেখায় আরো উঠে এসেছে আমাদের দেশের দুঃখিনী মেয়েদের কথা, ধর্ষিতার চিৎকার, কিভাবে শ্রমিকের ঘামের মূল্য দেয় বাইরের দেশগুলো, উচ্চ আবেদন ফি (Application Fee) চাকরি প্রত্যাশী তরুণদের জন্য যে কত বড় একটা মানসিক চাপ তা উঠে এসেছে ‘ বেকার তারুণ্যের দুর্ভোগ’ প্রবন্ধে। আমাদের বেকার তরুণরা কত কষ্ট করে (বিশেষ করে আর্থিক দিক) বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষা গুলোর জন্য। আমাদের দেশে অধিকাংশ পরীক্ষা হয় শুধুমাত্র রাজধানীকে কেন্দ্র করে। কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসে আমরা এখনো এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে পারিনি। লেখক তুলে ধরেন ইংল্যান্ড ও আমেরিকা যথাক্রমে সারা দুনিয়াতে আইইএলটিএস ও জিআরই,এসইটি পরীক্ষাগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। এই পরীক্ষাগুলো দেওয়ার জন্য কাউকে বাংলাদেশ থেকে ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকা যেতে হয় না। তাদের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তো ফাঁস হয় না।
তাই সময়ের সাথে সাথে আমাদের পরীক্ষাগুলোর ধরনও বদলানো উচিত। অন্ততপক্ষে এই ডিজিটাল যুগে এসে হলেও।
সবসময় যে আমরা বাইরের দেশগুলোর চেয়ে পিছিয়ে তা কিন্তু নয়। অনেক ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে এগিয়ে। যেমন দরুণ ,আমাদের দেশে গান কিলিং নেই। অর্থাৎ যার তার হাতে বন্দুক নেই। তাদের দেশগুলোতে আত্মাহত্যার হার বেশি। আমেরিকা এত পরাক্রমশালী দেশ হয়েও সেখানে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেই বললেই চলে। দেশটিতে ঋণ করার হার বেশি। যেখানে বাংলাদেশের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশ বিনামূল্যে শিক্ষা দিতে পারছে,অথচ দুনিয়ার পরাশক্তি আমেরিকা সেটা করতে পারছে না। আমাদের দেশে খাদ্য-সামগ্রীর মূল্য তুলনামূলক ভাবে আমেরিকার চেয়ে কম। আমেরিকার মানুষ নিঃসঙ্গ। যার ফলে তাদের মানসিক সমস্যা বেড়ে চলছে দিন দিন। আবার বিশ্ব শান্তি রক্ষায় আমেরিকার চেয়ে বাংলাদেশেই ভূমিকা রাখে বেশি। আবার কোনো দেশে যুদ্ধ বাঁধলে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি সৈন্য পাঠায়।আমাদের দেশে চার ধর্মের উৎসবগুলোতে সরকারি ছুটি আছে।আমেরিকায় শুধু খ্রিস্টান ধর্মের জন্যই ছুটি থাকে। এসব কথা উঠে এসেছে ‘বাংলাদে
শে যে দিকে আমেরিকার চেয়ে এগিয়ে’ প্রবন্ধে।
তারা যে সব কিছুতেই উন্নত, তা নয়। তাই লেখকের ভাষায় বলতে হয় আমাদের উচিত শুধু ভালো বিষয়গুলোই যেমনঃ তাদের শিক্ষানীতি,
গবেষণানীতি, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক চর্চা অনুসরণ করা। অথচ আমরা করি এর উল্টোটা।
আমরা কোনো একটা কাজ পরিকল্পনা করে করি না।মাথায় আসল হুট করে চালু করলাম আবার হুট করে বন্ধ করে দিলাম। এজন্যই বেশি প্রয়োজন গবেষণা লব্ধ জ্ঞান এবং সুপরিকল্পনা। একটা কিছু চালু করলে এটার ফল চল্লিশ কিংবা পঞ্চাশ বছর পর কি হবে সেটা মাথায় রেখেই করা উচিত।
‘নেতৃত্বের দূরদর্শিতা’ প্রবন্ধে লেখক তুলে ধরেছেন জওহরলাল নেহেরুর দূরদর্শিতার কথা। স্বাধীন ভারতে তার সরকার কতগুলো ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি গড়ে তুলেন। কোন দেশ যদি পৃথিবীর মঞ্চে নেতৃত্ব দিতে চায় তাহলে নিজস্ব প্রযুক্তি লাগবে। লাগবে নিজস্ব আবিষ্কার-উদ্ভাবন। অন্যদেশের জিনিস কিনে কেতা দূরস্ত হওয়া যায় কিন্তু স্বনির্ভর ও বলবান হওয়া যায় না।
লেখক বইটিতে বিভিন্ন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও গবেষণার কথা তুলে এনেছেন।
পরিশেষে এটাই বলতে পারি, ‘একটি দেশ যেভাবে দাঁড়ায়’ প্রথম বইটির মতো লেখকের ‘বাংলাদেশের স্বপ্নচোখ’ বইটিও অসাধারণ। বই দুটি পড়ে মনে হল আমরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান ও গবেষণাটাকে যদি রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে পারি তাহলেই উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছাতে বাংলাদেশের বেশি সময় লাগবে না।
এই বইটি নিয়ে অল্প লেখায় শেষ করা সম্ভব নয়। আমাদের দেশের প্রতিটি স্কুল, কলেজের লাইব্রেরীতে বই দুটি রাখা যেতে পারে।
ধন্যবাদ
শেখ বিবি কাউছার
প্রভাষক
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ
নোয়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ
রাউজান, চট্টগ্রাম।
koucherihc14@gmail.co