মতামত

মাহরাম

সালসাবিল করিম চৌধুরী::

আমি একদিন মারা যাব
নিয়ম করে সূর্য উঠবে সেদিন।
সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাতের চন্দ্রিমা
আলো ছড়াবে আকাশজুড়ে।
একটা কফিন আর লাল বাতি
লাগানো ইঞ্জিনের গাড়িতে মাটির
গন্ধ নেয়ার অপেক্ষা থাকবে সেদিন।

পেট্রোলের গন্ধ আর সাদাকাফনে
আমার দিন অথবা রাত্রিযাপন হবে।
প্রাণহীন এক নিথর দেহ মনে করিয়ে দেবে আজ আমি একটা রক্ত মাংসের টুকরো
আর অপ্রয়োজনীয় দেহ ছাড়া
আর কিছুই নই।
হাজারো অপ্রাপ্তির মাঝে আমার
অমর আত্মা জানবে
পৃথিবী কত সুন্দর!
তবে সুন্দর
ধরণীর এই বুকে মানুষ বড়ই আগন্তক।
গগণবিদারী আর্তনাদে
কাঁদবেনা কেউ সেদিন।
কাফনে মোড়ানো মুখখানা
দেখার লাইসেন্স সেদিন
কারও থাকবে না
কিছু রক্তের বাঁধন ছাড়া।

একমাত্র আমার জাত
আর কূল পাবে আমাকে ছুঁয়ে
দেখার নিমন্ত্রণ পত্র।
জীবনে চলার পথে আমি
জেনে গেছি এ জগতের সকল
পুরুষ আমার জন্য মাহরাম!
আমি কারও বোন নই,
নই কারো মাতৃসম
কেউ আমার পিতা নয়
আমি কারও অর্ধাঙ্গিনী নই।
আমার মুখের হাজিরায়
থাকবে শুধু আমার নিজের
জাত আর কূল।

মাহরাম উপাধির আমার হাজারো
আপনজন যারা আমাকে অজ্ঞাত
কারণে বোন ডেকেছে, মা ডেকেছে
হায়েনাদের ছোবল থেকে রক্ষা করেছে
তারা ধর্মের বেড়াজালে অধিকার হারাবে
শেষ বিদায়ের দিন।

নিরবে গোলাপ হাতে দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদবে।
গোলাপের কাঁটায় আমাকে না দেখার শোকে বিদ্ধ হবে, রক্তাক্ত হবে, তামাশা দেখবে।

বরফযানে বসে আমিও কাঁদব এই ভেবে যে যাদের হাতে আজ আমার বিদায়ের
নিমন্ত্রণ পত্র তারা আমার কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত, ঘৃণিত আর অযাচিত।
একদিন তাই বিধাতার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম-শেষ বিদায়ের দিন যেন
আমার রক্তের খরস্রোতে প্রবাহিত না হয়,আমি যেন আমার অনাত্মীয়ের হাতে সাজানো সুশোভিত কোনো ফুলের
বাগানে চিরনিদ্রায় যেতে পারি।
জীবদ্দশায় যে আমিটা এতটা দগ্ধ হয়েছি
মৃত্যুকালে আমাকে দেখার উৎসবে
তাদের আমি মাল্যদান করতে
চাই না কখনো।

ক্ষমার কাতারে আমি তাদের দেখতে চাই না।
না আমি চাই না, এত মহান আমি নই।
হিসাবের খাতা আমি জমা করে রেখেছি।
বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য আর শ্রাবণ মাসের সব
অধিকারহরণের ক্ষণ আর অন্যায়ের মূহুর্ত
আমার কাছে আজ অব্দি মূর্ত, জাগ্রত আর ক্ষত।

শেষ বিচারের দিন বিধাতার কাছে জানতে চাইব মাহরামের আসল সংজ্ঞা কী?
কে আমার বাবা?
কে আমার ভাই?
কে আমার চাচা,মামা আর আপনজন?
তাদের কতটুকু ছায়া, দায়িত্ব আর মমতা
আমাকে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার
আকুলতা দিয়েছে?

 

লেখকঃ সালসাবিল করিম চৌধুরী, প্রভাষক, ইংরেজি বিভাগ,
নোয়াপাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং কবি ও প্রাবন্ধিক

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button