মতামত

বিশ্ব প্রাণী দিবস আজ: প্রাণীর চোখের ভাষা বুঝতে হবে

শামীমা আক্তার শাম্মী::

দুনিয়ার সব প্রাণীর আলাদা ভাষা রয়েছে। মুখে কিংবা দেহভঙ্গিতে সে ভাষার প্রকাশ দেখা যায়। কথা বলা কিংবা না বলে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমেও ভাষার প্রকাশ ঘেটে। এমনকি  স্রেফ চোখ পড়েও সে ভাষা বুঝা যায়। কারণ, যে কোন একটি প্রাণীর চোখের মধ্যেও দুর্দান্ত ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা রয়েছে।

আমরা যদি পোষা প্রাণীনহ অন্যান্য প্রাণীর প্রতি সদয় থাকি তাহলে প্রাণীদের দৃষ্টিতেও দয়া আসবে। কারণ, প্রাণী হল আয়নার মতো, যা প্রতিবিম্বিত করে। পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে সাধারণত দেখা যায়, আপনি যখন খুশি হন, আপনি দেখতে পাবেন আপনার কুকুরটি হাসছে এবং যখন আপনি দুঃখিত হন তখন আপনার বিড়াালটি চিৎকার করছে।

বিশ্ব প্রাণী দিবস আজ। পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের অধিকার নিশ্চিতে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।

বিশ্ব প্রাণী দিবস সর্বপ্রথম হেনরিক জিম্মারমেন নামের একজন জার্মান লেখক ও প্রকাশক মেন্স উন্ড হুন্দ (মানুষ ও কুকুর) নামের একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশ করেছিলেন। তিনিই প্রথম ১৯২৫ সালের ২৪ মার্চ জার্মানির বার্লিন স্পোর্ট প্যালেসে এ দিবস উদযাপন করেন। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ অংশ নেন। পরে ১৯৩১ সালে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলনে ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

সেই থেকে প্রাণীদের কল্যাণার্থে ও তাদের অধিকার রক্ষার্থে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৪ অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব প্রাণী দিবস।মানুষের পোষা প্রাণীসহ চারপাশের নানা প্রাণী দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক উপকার করে। সেই অবদানকে মনে রাখা ও প্রাণীদের প্রতি সদয় হওয়াই হচ্ছে প্রাণী দিবসের মূল উদ্দেশ্য। অনেক উপকার করা সত্ত্বেও আমরা অনেক সময় এসব প্রাণীকে ঠিকমতো খাবার দেই না। বিষয়টি সত্যিই অমানবিক।

বিশ্ব প্রাণী দিবসের আনুষ্ঠানিক ওয়েবসাইটের মতে, এ দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে প্রাণীদের কল্যাণের মাধ্যমে এদের অবস্থার উন্নতি করা। বিশ্ব প্রাণী দিবস উদযাপনের মাধ্যমে প্রাণী কল্যাণ আন্দোলনকে একত্রীত করা, একে আন্তর্জাতিকভাবে জোরদার করে পৃথিবীকে প্রতিটি জীবের জন্য উন্নততর বাসস্থান হিসেবে গড়ে তোলা।

জাতি, ধর্ম, বিশ্বাস বা রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে দিবসটিকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয়।

অধিক জনসচেতনতা ও শিক্ষার মাধ্যমে বিশ্বকে গড়ে তুলি যেখানে প্রাণীদের সংবেদনশীল প্রজাতি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং তাদের কল্যাণে মনোযোগ দেওয়া হয়।

‘সব্বে সত্তা সুখিতা ভবন্তু’ অর্থাৎ ‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক’- এটি বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক মহামতি গৌতম বুদ্ধের মূলমন্ত্র। তিনি সকল প্রাণীর প্রতি দয়াবান থাকতে বলেছেন।

আমাদের ইসলামে তো বলা হয়েছে, পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। পশু-পাখিকে কষ্ট দেওয়া গুনাহের কাজ। পশু-পাখির সঙ্গে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। এদের সঙ্গে যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।

প্রাণীকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি : কোনো প্রাণীকে অযথা কষ্ট দিলে অবশ্যই এর শাস্তি ভোগ করতে হবে।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবে, ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে অযথা হত্যা করেছিল, সে কোনো লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি।’ (নাসায়ি: ৪৪৪৬)। নিরীহ বিড়ালকে কষ্ট দেওয়ার কারণে এক মহিলার জন্য জাহান্নামের ফয়সালা করা হয়েছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘একজন নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খাবার দেয়নি এবং ছেড়েও দেয়নি; যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।’ (বুখারি : ৩৪৮২)

প্রাণীর প্রতি মমতার পুরস্কার : রাসুল (সা.) প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে এক মহিলার জাহান্নামে যাওয়ায় কথা যেমন বর্ণনা করেছেন, তেমনিভাবে এদের প্রতি সহনশীলতা ও মমতা প্রদর্শন করে একজন ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার ঘটনাও বর্ণনা করেছেন এভাবে ‘রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এক ব্যক্তির ভীষণ পিপাসা লাগে। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে।

সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তায়ালা তার আমল কবুল করলেন এবং তার গুনাহ মাফ করে দিলেন।’

সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে? তখন নবীজি বললেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করার ফলেও রয়েছে অনেক পুণ্য ও পুরস্কার!’ (বুখারি : ২৩৬৩)

শামীমা আক্তার শাম্মী: লেখক ও সংগঠক।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button