মতামত

মাত্র ১ মিনিটে চারদিক ধ্বংসস্তূপ

শেখ বিবি কাউছার:: যখন তিনি কোন কার্য সম্পাদনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেটিকে একথাই বলেন, ‘‘কুন ফায়াকুন’’ হও, হয়ে যাও’ তৎক্ষণাৎ তা হয়ে যায়। সূরা বাকারা-১১৭

ছবিটি ‘গাজিয়েনতেপ ক্যাসেল’ এর। কয়েকদিন আগেও যেটি রোম, বাইজান্টাইন কিংবা অটোমান সাম্রাজ্যের সাক্ষী হয়ে সগৌরবে দাঁড়িয়ে ছিল। শত শত যুদ্ধ- বিগ্রহ – বিজয় এটিকে ধ্বংস করতে পারেনি, অক্ষত ছিল প্রতিটি ক্ণা। সভ্যতা ধ্বংস হওয়ার কথা আমরা ইতিহাসে পড়েছি কিংবা শুনেছি। কিন্তু চোখে দেখিনি। দেড় মিনিটের ভূমিকম্পটি যেন হার মানিয়েছে যুগ যুগ ধরে গড়া,সভ্যতাকেও।

তীব্র শীতের এই সময়টাতে অধিকাংশ মানুষ ছিল ঘুমের রাজ্যে। ঠিক সেই মূহুর্তে কেঁপে ওঠে তুরস্ক ও সিরিয়ার অধিকাংশ এলাকা। প্রতিবেশী লেবানন, ইসরায়েল, ফিলিস্তিন ও সাইপ্রাসও কেঁপে ওঠে সেই ভূমিকম্পে।

বলছি ‘ গাজিয়েনতেপ ক্যাসেল’ এর কথা। ৭.৮ মাত্রর ভয়াবহ ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ২০০০ বছরের পুরনো এই দুর্গ। এক সময় এটি প্রথম খ্রিষ্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দে হিট্টি সভ্যতার নজরদারির কাজে ব্যবহার হতো। তারপরে ২য় এবং ৩য় শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্য এটিকে প্রধান দূর্গে প্রসারিত করে। সে সময়ও প্রাসাদটিকে ব্যবহার করা হতো ‘ওয়াচ টাওয়ার’ হিসেবে। এতে ১২ টি টাওয়ার ও চারপাশে একটি পরিখা ছিল। ইতিহাস জুড়েই আছে এটিকে নিয়ে জয় পরাজয়, পুনরায় দখল করার গল্প। রোমান সাম্রাজ্য দুভাগে ভাগ হওয়ার পর এটি চলে যাই বাইজান্টাইনদের হাতে।

প্রথম জাস্টিনিয়ান এটি সংস্কার করেছিলেন। ৬৬১ খ্রি: দূর্গের শাসন হারান খ্রিষ্টানরা। এরপর উমাইয়া রাজবংশ এটি দখল করে। এটি ৬৬২ সাল পর্যন্ত মুসলিমদের শাসনে ছিল। পরে বাইজান্টাইনরা তা পুনরায় দখল করে।

গাজিয়ানতেপ ক্যাসেল অটোমানদের দখলে যায় ১৫১৬ সালে। এটি বৃহৎভাবে পুননির্মাণ করা হয় দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট খ্যাত সুলতান সুলেমান এর আমলে। অটোমানরা ১৫৬৬ সাল পর্যন্ত তা দখল করে রাখে। দূর্গটি তুরস্কের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে ব্যবহার হতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে সেই ছবি যে ছবি কয়েকদিন আগেও দাঁড়িয়ে ছিল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। এখন তা ধ্বংসস্তূপ! পাথরের খন্ড রাস্তায় স্তুপ হয়ে আছে! ভাবা যায়!

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button