শিল্প ও সাহিত্য

পুরষ্কারে আর নয় বাসন-কোসন, খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসুন

বিবি হাওয়া স্নেহা: বাবার বাড়িতে গেলে শোকেসের সামনে দাঁড়ালেই কিছু বাসন-কোসন চোখে পড়ে, তখনই যেন মন চলে যায়- সবুজ ঘাসে ঘেরা অপর্ণাচরণ স্কুলমাঠে!

বাঁশির শব্দ কানে আসতেই ভোঁদৌড়। আকাশি জামা আর লাল ফিতায় দুইবেণী করা চুল উড়ছে বাতাসে। শুরুতে পিছিয়ে থাকলেও ধীরে ধীরে আবিষ্কার করি আশেপাশে কেউ নেই। ছুটে গিয়ে ম্যামের কোলে ঝাঁপিয়ে পড়া। ম্যাম হাত তুলে চিৎকার করেন- এইটা প্রথম! তুমি প্রথম হয়েছো!

হাইজাম্পের বার দেখলে পারবো না মনে হলেও, আলগোছে পেরিয়ে যাওয়া কিংবা দম খিঁচে সর্ব্বোচ্চ দূরত্বে লংজাম্প! পুরস্কার হিসেবে চিনামাটির বাসন-পেয়ালা বহন করতে গিয়ে হাত ব্যাথা হতো ঠিকই, কয়েকদিন আম্মু বেশ খাতির-যত্ন করতেন।

আর মিটিমিটি হাসি মুখে লেগে থাকতো। আম্মুর সেই হাসিই হয়তো পরের বছর আরো ভালো করার অনুপ্রেরণা জোগাতো। আমার যে বন্ধুরা নাচে-গানে পারদর্শী ছিলো- তারাও অনেকগুলো বাসন-কোসন পেতো।

পেরিয়েছে প্রায় দুই দশক! তবে স্কুলগুলোতে পুরস্কার হিসেবে প্লেট-বাটি দেয়ার সেই চল এখনো বহাল আছে।

ফেসবুকের কল্যাণে সশরীরে উপস্থিত না থেকেও যেকোনো অনুষ্ঠান কিছুটা দর্শন করা যায়। গত কয়েকদিন নিউজফিডের ছবিগুলোতে পই পই করে খুঁজছিলাম এবং মন থেকে চেয়েছিলাম ভিন্ন কিছু দেখবো হয়তো।

যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রম, নতুন বার্তা, নতুন পরিবেশ, নতুন চাহিদা। এবার বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থীদের খুব দরকার ছিলো। সারাবছর শিক্ষা উপকরণ কিনতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হিমশিম খেতে হয়। সেক্ষেত্রে এধরনের পুরস্কার তাদের কাজে আসতো।

এছাড়া জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ টিকেট হিসেবে বইয়ের উপযোগিতা তো সবসময়ই রয়েছে। কিন্তু, তেমন কিছু চোখেই পড়লো না! অথচ, এ বিষয়ে ২০১৯ সালে মাউশি প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপনের কার্যকর বাস্তবায়ন কেন হয়না- আমার জানা নেই! পুরস্কার হিসেবে ক্রোকারিজ আইটেমের উপযোগিতা হয়তো একসময় ছিলো।

পরিবারে এই আইটেমগুলো দরকারি ছিলো, পরিবারের সদস্যরা খুশি হলেই অংশগ্রহণকারী প্রেরণা পেতো – বলে আমার ধারণা। তবে ক্রোকারিজ আইটেম কোনভাবেই প্রতিযোগীর দক্ষতা বৃদ্ধি, জ্ঞানের বিকাশ বা চর্চাকে সরাসরি প্রভাবিত করে না।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কার্যক্রম অবশ্যই শিক্ষার্থীর বয়স উপযোগী এবং মেধা-মননের বিকাশে সহায়ক হওয়া উচিত। তা না করে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে প্লেট-বাটি-হটপট-মগ ইত্যাদি ধরিয়ে দিয়ে যেনো বলছি- ‘যাও বাছা, সংসার শুরু কর’! যেমনটা করা হয়- বিয়ের অনুষ্ঠানে!!

পুরোনো খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময় যে বয়ে যাচ্ছে প্রিয়!

লেখকঃ বিবি হাওয়া স্নেহা, শিক্ষক ও সংগঠক।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button