মতামত

মাহে রমজানের পবিত্রতায় শুদ্ধ হোক জীবন

নুর মোহাম্মদ রানা:: ‘মাহে রমজান’ অর্থ রমজানের মাস। ‘রমজান’ শব্দটি আরবি ‘রময’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘রময’ অর্থ দহন বা পোড়ানো। এ মাসে রোজা পালন করলে মানুষের মধ্য থেকে লোভ-লালসা, পাপ ও হিংসা-বিদ্বেশ দূর হয়। রোজা পালনকারী রমজানে তার সব পাপ মুছে ফেলার সুযোগ লাভ করেন। রমজান মাসে পালিত রোজাকেই রমজানের রোজা বলা হয়। মাহে রমজানের গুরুত্ব ও ফযিলত অসীম।

পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে এর গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে জানা যায়, এ মাসে কুরআন নাযিল হয় ও রোজা ফরয হয়। এটি লাইলাতুল ক্বদরের মাস। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মাসের একটি ফরয আদায় অন্য মাসের সত্তরটি ফরয আদায়ের সমান। আর একটি নফল আদায় অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সমতুল্য।

রোজা শব্দটি ফার্সি শব্দ। আমরা আরবী শব্দ থেকে বলছি সিয়াম অর্থ হচ্ছে রোজা। সিয়াম শব্দটি এসেছে সাওম থেকে যার অর্থ বিরত থাকা। পারিভাষিক অর্থে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সর্ব প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকা। রমজান বা রোজা কি? রমজ শব্দের অর্থ পুড়িয়ে ফেলা। অর্থাৎ একজন মুমিনের জীবনে যা আল্লাহর পছন্দ নয় তা সিয়ামের আগুনে পুড়য়ে ফেলাই রমজানের প্রধান উদ্দেশ্য।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেন হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। রমজান রোজাদারের মানবাত্মাকে বিকশিত করে এবং ত্যাগ ও তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট লাভ করে। একমাত্র খোদাভীতিই মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। মহান আল্লাহ খোদাভীত মানুষকে কখনো বিপথগামী হতে দেন না। এক মাসব্যাপী রোজা অনুশীলন করে পরবর্তীকালে প্রতিটি মানুষ যেন রোজার গুণাগুণ নিজের আয়ত্বে রাখতে পারে।

সমাজে শানিত প্রতিষ্ঠায় এবং মানবতার কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার শিক্ষা একমাত্র রোজাতেই রয়েছে। মানবজীবনের গৌরব ও কল্যাণময় মহত্তের কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় রমজান। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পবিত্র রমজানের ফজিলত,গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন,পবিত্র রমজান মাস দয়া,কল্যাণ ও ক্ষমার মাস ৷

এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস ৷ এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন,এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান ৷রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস তথা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর দস্তরখান তোমাদের জন্যে উন্মুক্ত ৷ তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন। এ মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুণগান বা জিকিরের সমতুল্য;এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য,এ মাসে তোমাদের সৎকাজ এবং প্রার্থনা বা দোয়াগুলো কবুল করা হবে৷

তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা করো যে,তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন ৷গুনাহর জন্যে অনুতপ্ত হও ও তওবা কর এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্যে হাত উপরে তোলো,কারণ নামাজের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময়,এ সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান,এ সময় কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন,কেউ তাঁকে ডাকলে তিনি জবাব দেন,কেউ কাকুতি-মিনতি করলে তার কাকুতি মিনতি তিনি গ্রহণ করেন ৷কেননা পবিত্র কোরআনে সুরা গাফিরের ৫৯ নম্বর আয়াতে তিনি নিজেই বলেছেন,

হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ বলেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের জন্য, কেবল রোযা ছাড়া। কারণ তা আমার(আল্লাহর) জন্য আমি(আল্লাহ) তার প্রতিদান দেব। আর রোযা ঢাল স্বরূপ। কাজেই তোমাদের কেউ যখন রোযা রাখে, সে যেন অশ্লীল কাজ না করে শোরগোল না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সাথে ঝগড়া করে তাহলে তার বলা উচিত, আমি রোযাদার। রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মিশকের চেয়েও সুগন্ধযুক্ত।

রোযাদারের দুটি আনন্দ, যা সে লাভ করবে, একটি হচ্ছে সে ইফতারির সময় খুশি হয়। আর দ্বিতীয়টি লাভ করবে যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন সে তার রোযার কারণে আনন্দিত হবে।(বুখারী শরীফ) হাদিস শরীফে উল্লেখ রয়েছেন ইফতার পর্যন্ত রোজাদারের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন রোজাদারের জন্য প্রতিদিন, জান্নাতকে সজ্জিত করা হয় রমজানের শেষ রাতে সকল উম্মতকে মাফ করা হয়। রমজান জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার ঢাল।রমজান জান্নাতে যাওয়ার উৎকৃষ্টতম উপায় এবং রাইয়ান নামক বিশেষ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ রমজান গুনাহ মোচনের অন্যতম মাধ্যম রোজা।

আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে রোজা।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সুস্থ রেখে সঠিকভাবে রোজা রাখার তৌফিক দিন এবং আমাদের রোজা এবং আমলসমূহ কবুল করুন আমিন ।

নুর মোহাম্মদ রানা
প্রাবন্ধিক কলামিস্ট সাংবাদিক

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button