খবরাখবর

ঠিকাদার-বিসিকের টানাপোড়নে আটকে আছে রাউজান বিসিক শিল্প নগরী কাজ

আমির হামজা, রাউজান:: প্রায় এক’শ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দে ১৪৮টি শিল্প প্লট তৈরীর মাধ্যমে রাউজানের বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলার কাজ মাঝ পথে রহস্যজনক কারণে আটকে রয়েছে।

সংশ্লিস্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায় মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে বিসিক কর্তৃপক্ষের সাথে কাজের বিল নিয়ে জটিলতার কারণে কাজের গতি হারিয়েছে।

খবর নিয়ে জানা যায় রাউজানের সংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী পার্ব্বত্য চট্টগ্রামসহ আশপাশ এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নিয়ে ৩৫ একর জায়গা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। সাংসদ সদস্যের সুপারিশে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ ভুমি অধিগ্রহনসহ প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাট কাজ শুরু করেছিলেন।

সূত্র মতে বিসিক কর্তৃপক্ষের দেয়া ঠেন্ডার সিডিউল অনুসরণ করে মাটি ভরাট কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স বোস্তামী এন্টারপ্রাইজ মাটির কাজ শেষ করলেও বিসিক কর্তৃপক্ষ দেখতে পায় প্রকল্প এলাকায় শিল্প প্লট করার উপযোগি করতে হলে আরো মাটি ভরাট করা দরকার। এই উপলব্দি থেকে বিসিক এর প্রকল্প পরিচালক পরবর্তীতে যথাযত প্রক্রিয়ায় প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ বাড়ানো হবে এই আশ্বাসে ঠিকাদারকে মৌখিক অনুরোধ করে আরো মাটি ভরাট করান। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি কাজের বিল পেতে বিসিকের সাথে যোগাযোগ শুরু করে। কিন্তু বিসিক কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি শুরু করলে দুপক্ষের টানাপোড়নে পড়ে রাউজান শিল্পনগরীর কাজের গতি হারায়।

এলাকার সচেতন মহলের মতে রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আবাসন, যোগাযোগসহ সকল খাতে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।

বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এ অঞ্চলের বেকারদের কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা নিয়ে। তার এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে কমপক্ষে ১৫ হাজার নারী পুরুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশ এগিয়ে যাবে আরো অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিকে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর কর্মকর্তাদের মতে এই প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ৯৩ কোটি ৬৬লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে এই ব্যয়ে শত কোটি টাকায় পৌঁছবে। কর্তৃপক্ষের মতে ্এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে  প্রায় ৯০ ভাগ। উল্লেখ্য প্রকল্পটির কাজ ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

“এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিক চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক নিজাম উদ্দিন বলেন, মাটি ভরাটে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। কারণ গতকিছু দিনের বর্ষার কারণে মাটি ভরাটের কাজ সর্ম্পূণ করা যাইনি। আর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি আমাদের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারছেনা। সেই কারণে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করা যাচ্ছেনা। তিনি আরও জানান চলতি বছরের জুন মাসের ৫ তারিখ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কাজ সম্পূর্ণ করা যাইনি। আমরা এই প্রকল্পের সময়ে বাড়িয়ে আরও এক বছরের জন্য আবেদন করেছি। গার্ড ওয়ালের ও সীমানা প্রচীরের কিছু কাজ এখনো শেষ করা যাইনি। আশা করছি মাটি ভরাটের কাজ শেষ হলে আমরা এই বৃহত্তর প্রকল্পের কাজ বুঝিয়ে দিতে পারবো বলে তিনি জানান।”

জানা যায়, এ প্রকল্পের কাজ শেষ করে প্লট বরাদ্দ করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন শেষ না হওয়া এ প্রকল্পের সময় বাড়িয়ে তা ২০২৩ সালের ৫ই জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। প্রকল্পের মাটি ভরাট ও পরিচালনার জন্য অবকাঠামো নির্মাণও কাজ প্রায় শেষ। আগামী বছরের জুন মাসে এই শিল্প নগরীর আকার অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ৩৫ একর ভূমিতে ১৪৮টি প্লটে বরাদ্দ পাবে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের পরিচালনা সূত্রে জানা গেছে, এ বিশাল প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ১৪৮টি এসএমই ইউনিট স্থাপনের জন্য ১৮৪টি শিল্প প্লটের জন্য অবকাঠামোগত নানারকম কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দেশের উদ্যোক্তাদের শিল্প প্লটের বর্ধিত চাহিদা পূরণ করা। এই প্রকল্পের মধ্যে অসংখ্যা মানুষের কর্মসংস্থান হবে তার মাধ্যমে দেশের দারিদ্র বিমোচনসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি বৃদ্ধি করা সম্ভাব হবে।তিনি জানান এখানে গড়ে তোলা প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে একনেকে এ প্রকল্পের অনুমোদন পাস হয়। এ ৩৫ একর আয়তনের প্রতি একর জমির দাম পড়েছে প্রায় ৬৭ লাখ ৫২ হাজার ৫৪২ টাকা। মোট ভূমির মূল্য ২৩ কোটি ৬৩ লাখ ৩৮ হাজার ৯৭১ টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় হচ্ছে ৯ হাজার ৩৬৬ লাখ টাকা। এইমধ্যে পুরো প্রকল্প জায়গা জুড়ে দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রচীর।

বিদ্যুত ও গ্যাস লাইনের জন্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ২০১৬ সালে জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মেয়াদ ছিলো ২০১৯ সালের জুন মাস পর্যন্ত।

তবে ২০১৯ সালে যদিও এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ ফলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাইনি। সেই সময়ে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। নানা সমস্যার কারণে আরও দুই বছর বাড়ি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

এ শিল্পনগরী থেকে উৎপাদিত পণ্য রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পাশাপাশি অসংখ্যা মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে জানা গেছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যাই, পুরো প্লট জুড়ে মাঠি ভরাটের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। চারপাশে দেওয়া হয়েছে সীমানা প্রচীর। সেখানে সন্ধ্যা হলে আলোকিত হচ্ছে লাইটের আলোতে। সম্পূর্ণ হয়েছে প্রকল্পের পরিচালনার জন্য একটি অফিস। প্রকল্পের ভেতরে থাকা খালের দুই পাশে প্রায় ৭’শ ফুট দীর্ঘ রিটেনিং গার্ড ওয়ালের কাজ চলছে। বলা যেতে পারে প্রায় প্রস্তুত হয়ে উঠেছে রাউজানের বিসিক শিল্প নগরী কাজ।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button