মতামত

আজকের সঞ্চয় আগামী দিনের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ

মো: জিল্লুর রহমান::

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালু কণা বিন্দু বিন্দু জল, সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এ কথাটি চরম সত্য। আয়-ব্যয়-সঞ্চয় এই শব্দগুলো অর্থনীতির সাথে সম্পর্কিত হলেও এগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমরা যে আয় করি, পাশাপাশি তা খরচও করি। আমাদের চাহিদার শেষ নেই। এক প্রয়োজন পূরণ হতেই নতুন আরও অনেক প্রয়োজন জীবনে এসে হাজির হয়। ফলে প্রতিনিয়তই ব্যয় হচ্ছে কিন্তু আমরা অনেকেই সঞ্চয় করি না বা করার কোন পরিকল্পনা হাতে রাখি না। আর সময় মতো সঞ্চয় না করলে, ভবিষ্যত অনেক সময় আমাদের কাছে অন্ধকার মনে হয়।

অনেকে এ করোনা মহামারীর মধ্যে ধীরে ধীরে সঞ্চিত জমানো টাকা খরচ করছে। এটা বিপদের বন্ধুর মতো কাজ করছে, মনে হয় যেন বিপদের সময় যক্ষের ধন, বিপদের অতি আপনজন। আসলে সঞ্চয় ভবিষ্যতে এ ধরনের যেকোন বিপদে বর্মনের মতো ভূমিকা পালন করে। বিপদের সময় আপনজন দূরে সরে যেতে পারে, অতি আপনজন ধার দিতে কুণ্ঠাবোধ করতে পারে, কিন্তু সঞ্চয় বিশ্বস্ত বন্ধুর ভূমিকা পালন করবে।

সঞ্চয় হচ্ছে ভবিষ্যতের মাপকাঠি, স্বপ্নের সিড়ি ও চরম বিপদের বন্ধু। ভবিষ্যতে বৃদ্ধ বয়সে অবসনকালীন সমযে আরাম আয়েশ করা, ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া, বিয়ে শাদি, হঠাৎ অসুস্থ হলে চিকিৎসা ব্যয় মিটানো ইত্যাদি নানা প্রয়োজনে সঞ্চয় খুব উপকারে আসে। তাই ভবিষ্যতে অর্থের সংকট মেটাতে সকলের সঞ্চয় করার অভ্যাস করা জরুরী। কালকের কথা চিন্তা না করে আজ থেকেই অল্প অল্প সঞ্চয় করা উচিৎ। হতে পারে সেটা মাটির ব্যাংক, সমিতি, বেসরকারি সংস্থা বা কোন তফসিলি ব্যাংক।

আয় ব্যয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে সঞ্চয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। একটি সঠিক এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টিকে মনে মনে প্রতিদিনই আওড়াতে থাকলে নিজ মনে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা স্মরণ করে দিবে। সঞ্চয়ের জন্য ভবিষ্যত এবং বর্তমান জীবনের একটি সঠিক পরিকল্পনার সমন্বয় করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সঞ্চয়ের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। জীবনে আমরা অনেকেই অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় কাজ করে থাকি যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে না করলে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। এই ধরনের অপ্রয়োজনীয় কাজ যেমন অযথা শপিং করা, কোথাও ঘুরতে যাওয়া, অযথা কাউকে উপহার দেয়া বা খাওয়ানো এগুলো ত্যাগ করতে হবে। এর ফলে যেকারও সঞ্চয়ের মাত্রা অনেক বেশি বেড়ে যেতে পারে।

জীবনের প্রথম আয় থেকেই সঞ্চয় শুরু করা উচিৎ। একজন লোক যত বেশি মিতব্যয়ী হবে, তার সঞ্চয়ের পরিমাণও তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে মিতব্যয়ীতার অর্থ কৃপণতা নয়। সকল ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিলাসিতা নিয়ন্ত্রণ করেই সঞ্চয় করা উচিৎ। এজন্য উৎপাদন ও আয় বাড়াতে সদা সচেষ্ট হতে হবে। আয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খরচ করে সঞ্চয় করার অভ্যাস করতে হবে। তবে সঞ্চয়ের মূল টাকা খরচ করা সুবিবেচকের কাজ নয়। সঞ্চয়কৃত মুনাফার টাকা বিশেষ প্রয়োজনে খরচ করা যেতে পারে।

বর্তমানে শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সঞ্চয় প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঞ্চয় করার জন্য প্রয়োজন সুপ্ত আগ্রহ বা ইচ্ছা। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে জনগণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা, সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব তাদের কাছে তুলে ধরা দরকার। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নতুন নতুন স্কিম হাতে নিতে হবে সঞ্চয়কে একীভূত করার জন্য, যাতে তারা ইচ্ছা করলেই সঞ্চয় করতে পারে।

আয় থেকে নির্ধারিত ব্যয় বাদ দিয়ে সঞ্চয় করতে হবে। একজন মানুষকে মিতব্যয়ী হতে হবে। ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিলাসিতা ত্যাগ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে খরচ করতে হবে। সঞ্চয় করার জন্য বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয় করা যেতে পারে। সঞ্চয় যেভাবে গড়ে উঠতে পারে তা হচ্ছে জীবনের প্রথম আয় থেকেই সঞ্চয় শুরু করা। যে সঞ্চয়ের মূল টাকা কখনও খরচ করা হবে না। ঐ সঞ্চয়কৃত মুনাফার টাকা বিশেষ প্রয়োজনে খরচ করা যেতে পারে। ঢাকা শহরসহ গ্রামাঞ্চলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সঞ্চয় প্রবণতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঞ্চয় করার জন্য প্রয়োজন আগ্রহ বা ইচ্ছা। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে জনগণকে সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে নতুন নতুন স্কিম হাতে নিতে হবে সঞ্চয়কে একীভূত করার জন্য, যাতে তারা ইচ্ছা করলেই সঞ্চয় করতে পারে।

অর্থ সঞ্চয়ের জন্য বর্তমানে ব্যাংকগুলো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকে। ইচ্ছে করলে এই সুযোগগুলো কাজে লাগিয়ে অর্জিত অর্থের কিছু অংশ বিনিয়োগও করা যেতে পারে। এভাবে ফিক্সড ডিপোজিট করতে পারলে অর্থ সঞ্চয়ও করার পাশাপাশি অতিরিক্ত মুনাফাও অর্জন করা যায। সঞ্চয় করার জন্য ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থায় সঞ্চয় করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঐসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম, সুখ্যাতি ও নিবন্ধিত কিনা তা যাচাই করে নিতে হবে।

সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে দেশে সরকারী ও বেসরকারীভাবে ব্যাংক-বীমাসহ নানা সংস্থার কার্যক্রম চালু রয়েছে। এসব সংস্থায় সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়লে এক সময় বড় ধরনের আমানত সঞ্চিত হয়। যা থেকে দোকান, ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ এবং দৈবত-দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ ও পড়াশোনার খরচ মেটানো সম্ভব হয়। দৈনন্দিন জীবনে নানা প্রয়োজনে টাকা খরচ করতেই হবে। এক্ষেত্রে যদি একটু সাবধান হওয়া যায় তবেই ব্যক্তিগত জীবনে সমৃদ্ধি চলে আসে। মিতব্যয়িতা জীবনের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে শতভাগ সফল একটি পদ্ধতি। সংসারের প্রয়োজন মিটিয়ে সঞ্চয় করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বাঁচার পথ তৈরি করা উচিত। এ জন্য প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা সঞ্চয়ে রাখা যেতে পারে। আর এটা করা গেলে আর্থিকভাবে দিনকে দিন সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়া সহজ হবে।

ভবিষ্যতের স্বপ্নের সিড়ি বাস্তবায়নের জন্য জীবনে সকলকে সাধ্যমত সঞ্চয় করা উচিৎ। সঞ্চয় দেশের অর্থনীতির ভিত্তি মজবুত করে এবং উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে গতিশীল করে। সঞ্চয়ে বিনিয়োগের মতো কোন ঝুঁকি নেই, এজন্য সঞ্চয়কে বলা হয় ভবিষ্যতের সবচেয়ে ভাল বন্ধু ও উত্তম বিনিয়োগ। সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিন্দু গড়ে তোলে সিন্ধু।

লেখক, মো: জিল্লুর রহমান, ব্যাংকার ও ফ্রিল্যান্স

Please follow and like us:

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button