খবরাখবর

সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা হৃদয়ে বাবা-মা

আমির হামজা, রাউজান:: ঘরের একমাত্র আশার প্রদীপ ছিলেন সন্তান শিবলী সাদিক হৃদয়। ছেলে আর জীবিত নেই খবরটি শোনার পর থেকে দিশেহারা বাবা আর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে মা। সন্তানকে হারিয়ে বাধ মানছে না অশ্রু। ঘরের আদরের সন্তানকে হারিয়ে কিছুতেই থামছেনা মায়ের আহাজারি। কে জানতো বিনা কারণে ছেলের সাথে এমন ঘটনা হবে।

শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে শুধু হৃদয়ের কদলপুর গ্রাম নয় পুরো চট্টগ্রামের মানুষ এই ঘটনায় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে রাউজানের হৃদয় কাঁদিয়েছেন। হৃদয়ের এমন ঘটনা পুরো বাংলাদেশের মানুষে মনে আঘাত লেগেছে। সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ প্রতিবাদের ঝড় তুলেছেন। কেন মুক্তিপণ নেওয়া পরও হৃদয়কে হত্যা করেছেন তারা।

হৃদয়কে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করেন। ছেলেকে ফিরে পাওয়া আশায় দিয়ে ছিলেন ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ। কিন্তু টাকা দেওয়া পরও জীবিত রাখা হয়নি হৃদয়কে।

শিবলী সাদিক হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার বলেন, অনেক বড় আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম আমার আদরের সন্তানের জন্য। অপহরণকারীদের কথা মতো এলাকার মানুষের কাছ থেকে দারদেনা করে ২ লাখ টাকা তাদের দেওয়া পরও কেন আমার সন্তানকে তারা জীবিত রাখেনি। অনেক আশা নিয়ে ছেলের অপেক্ষায় পথ চেয়ে অপেক্ষায় ছিলাম হৃদয়ে মুখ দেখবো। আমার বুকটা খালি করে দিয়েছে তারা। আমার হৃদয়ের হৃদয় আমার জাদুতো আর ঘরে ফিরে আসলো না। আমার ছেলেকে তারা টুকরো টুকরো করে হত্যা করেছে, আমার সন্তানের এক টুকরো তারা মাংস রাখেনি শুধু হাড্ডি পেয়েছে, অ-জাদু তোরে ছাড়াতো আয় থাকতে পারবো না। কিছুতেই বুকের মানিককে হারানোর শোক ভুলতে পারছেন না মা নাহিদা আকতার আর বাবা শফি।

হৃদয়ের ফুফি কান্নাকাটি করে বলছেন, আমার বাতিজার মাংস দিয়ে সেই চাকমা উপজাতিরা রান্না করে তারা মাংস খেয়েছে। সন্তান হৃদয়কে নিয়ে স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তার বাবা মা। কিন্তু মুক্তিপণ দিয়ে কেড়ে নেয় সন্তানের প্রাণ।

আরও পড়ুন: রাউজানে মুক্তিপণ দিয়েও প্রাণ হারাতে হলো হৃদয়কে, উত্তেজিত জনতার গণপিটুনিতে অপহরণকারীর মৃত্যু

কলেজে পড়া অবস্থায় পড়াশোনার খরচ যোগাতে সেই মুরগির ফার্মে চাকরি করতেন। সেই মুরগির খামারে চাকরি করা নিষ্ঠুর চাকমা যুবকদের হাতে বলি হয় মেধাবী শিক্ষার্থী হৃদয়। তার মৃত্যুর মধ্যদিয়ে নিভে গেল তাদের পরিবারে আলোর মশাল। পুরো এলাকার বাতাস যেন শোকে ভারী হয়ে পড়েছে।

কান্না থামাতে পারছেনা হৃদয়ের সহপাঠীদের। শোক বিরাজ করছে হৃদয়ের কলেজ কদলপুর স্কুল এন্ড কলেজ জুড়ে।

গত ২৮ আগস্ট শিবলী সাদিক হৃদয়কে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়া পরও, তাকে হত্যা করা হয়। প্রধান আসামী উমংচিং মারমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে হৃদয়ের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয়ের লাশ নিয়ে পুলিশ ফিরার পথে গত সোমবার উত্তেজিত জনতা পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে প্রধান আসামী উমংচিং মারমাকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করেন।

উল্লেখ্য, নিখোঁজের ১১দিন পর গত ৭ সেপ্টেম্বর হৃদয়ের মা বাদি হয়ে রাউজান থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় অজ্ঞাতসহ ৬জনকে আসামি করা হয়।

তারা হলেন উমংচিং মারমা (২৬), সুইচিংমং মারমা (২৫), অংথুইমং মারমা (২৫), উক্যাথোয়াই মারমা। এফআইআরে উল্লেখ করা ৬জনের মধ্যে আরও ২ জনকে পার্বত্য জেলার কাউখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ২জন হলেন বেতবুনিয়া ৬নম্বর ওয়ার্ডের উহ্লা প্রমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা (২৬), কাপ্তাই থানার চিৎমরং ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার উষাচিং মারমার ছেলে ঊক্যথোয়াই মারমা (১৯)।

হৃদয়ের এলাকার লোকজন বলেন, হৃদয় একজন ভালো ছেলে, সেই পড়াশোনার পাশাপাশি মুরগির খামারে চাকরি করতেন। তার ভদ্রতা রেখে এলাকায় চলতেন। তার স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা শেষ করে তার দরিদ্র পরিবারে হাল ধরতে। কিন্তু তার সাথে ছোট একটা বিষয় নিয়ে এতো বড় একটা অপরাধ করা আসামিদের ঠিক হয়নি।

শিবলী সাদিক হৃদয় উপজেলার কদলপুর ইউনিয়নের ৯নম্বর ওয়ার্ডের রওশান আলী বাড়ির মুহাম্মদ শফির ছেলে। কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

উল্লেখ্য, গত ২৮ আগস্ট রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের পঞ্চপাড়া গ্রামের একটি মুরগি খামার থেকে উপজাতী যুবকের হাতে অপহৃত হয় কলেজছাত্র হৃদয়। পরে তাকে মুক্তিপণ দিয়ে হত্যা করা হয়।

Please follow and like us:

Related Articles

Back to top button